নগদান বই || Cash Book

নগদান বই কি? নগদান বই কাকে বলে? নগদান বই কয় প্রকার? দুই ঘরা নগদান বই কি? তিন ঘরা নগদান বই কি? খুচরা নগদান বই বা বহুঘরা নগদান বই কি? নগদান বই কেন প্রস্তুত করা হয়? নগদান বই নির্ণয়ে কি কি মনে রাখতে হবে? কন্ট্রা এন্ট্রি বা বিপরীত দাখিলা কি? নগদান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না কি কি?

নগদান বই কি? নগদান বই কাকে বলে?

যে বইয়ে নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান টাকার হিসাব রাখা হয় তাকে নগদান বই বলে।

নগদান বই কয় প্রকার?

নগদান বই ৪ প্রকার। যথাঃ 
১. এক ঘরা নগদান বই
২. দুই ঘরা
৩. তিন ঘরা
৪. খুচরা নগদান বই বা বহুঘরা নগদান বই

এক ঘরা নগদান বই কি?

শুধু মাত্র নগদ টাকার লেনদেন এর হিসাব রাখতে যেই নগদান বই প্রস্তুত করতে হয় তাকে এক ঘরা নগদান বই বলে।

দুই ঘরা নগদান বই কি?

নগদ টাকার লেনদেন এর সাথে যদি চেক ও ব্যাংক এর লেনদেন থাকে তখন যে নগদান বই প্রস্তুত করতে হয় তাকে দুই ঘরা নগদান বই বলে।

তিন ঘরা নগদান বই কি?

নগদ ও ব্যাংক টাকার পাশাপাশি দেনা পাওনা নিস্পত্তি বা বাট্টা প্রাপ্তি/প্রদান থাকলে যে নগদান বই প্রস্তুত করতে হয় তাকে তিন ঘরা নগদান বই বলে।  

খুচরা নগদান বই বা বহুঘরা নগদান বই কি?

বড় প্রতিষ্ঠানে ছোটখাট নগদ খরচ এর হিসাব রাখতে প্রধান নগদান বইয়ের পাশাপাশি বহু ঘর বিশিষ্ট যে নগদান বই প্রস্তুত করা হয় তাকে খুচরা নগদান বই বা বহুঘরা নগদান বই বলে।

নগদান বই কেন প্রস্তুত করা হয়?

১. নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান টাকার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
২. নগদ টাকার উদ্বৃত্ত বা ব্যাল্যান্স নির্ণয় করা হয়।

নগদান বই নির্ণয়ে কি কি মনে রাখতে হবে?

নগদান বই নির্ণয়ে যা যা মনে রাখতে হবে তা হলঃ

১. প্রাপ্তির দিকের আরেক নাম ডেবিট দিক এবং প্রদান দিকের আরেক নাম ক্রেডিট দিক।

২. হাতে নগদ / নগদ উদ্বৃত্ত, ব্যাংক জমা/ ব্যাংক জমার ডেবিট উদ্বৃত্ত নিয়ে ব্যবসায় শুরু করলে নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাল্যান্স বি/ডি লিখতে হয়।

৩. ব্যাংক জমার বদলে ব্যাংক জমাতিরিক্ত বা ব্যাংক ও / ডি থাকলে ব্যাল্যান্স বি / ডি ক্রেডিট দিকে লিখতে হয়।

৪. ১ তারিখে মূলধন আনলে মূলধন হিসাব লিখতে হয়, ব্যাল্যান্স বি/ডি লেখা যাবে না।

৫. নগদে প্রাপ্তি হলে ডেবিট দিকে নগদ টাকার কলামে লিখতে হবে।

৬. নগদে প্রদান হলে ক্রেডিট দিকে নগদ টাকার কলামে লিখতে হবে।

৭. ব্যাংক, চেক, ATM কার্ড এ প্রাপ্তি হলে টাকা ডেবিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।

৮. ব্যাংক, চেক, ATM কার্ড এ প্রদান হলে টাকা ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।

৯. অন্যান্য সকল প্রাপ্তি ও আয় সমূহ প্রাপ্তি/ডেবিট দিকে আসে ।  

১০. অন্যান্য সকল প্রদান ও ব্যয় সমূহ প্রদান/ক্রেডিট দিকে আসে ।

১১. জমাকৃত চেক প্রত্যাখান প্রদান/ক্রেডিট দিকে লিখতে হবে।

১২. ইস্যুকৃত চেক প্রত্যাখান প্রাপ্তি/ডেবিট দিকে লিখতে হবে।

১৩. ব্যাংক সুদ মঞ্জুর অর্থ সুদ প্রাপ্তি হয়েছে।

১৪. ব্যাংক সুদ চার্জ বা ধার্য অর্থ সুদ প্রদান করা হয়েছে।

১৫. দেনাদার পূর্ণ নিস্পত্তিতে যে বাট্টা দেয়া হয় তা  তিন ঘরা নগদান বইয়ে প্রাপ্তি/ডেবিট দিকে প্রদত্ত বাট্টা কলামে লিখতে হবে।

 ১৬. পাওনাদার পূর্ণ নিস্পত্তিতে যে বাট্টা পাওয়া যায় তা  তিন ঘরা নগদান বইয়ে প্রদান/ক্রেডিট দিকে প্রদত্ত বাট্টা কলামে লিখতে হবে।

১৭. বাক্তিগত উত্তোলন ও ব্যবসার প্রয়োজনে উত্তোলন ভালভাবে বুঝতে হবে।

১৮. কন্ট্রা এন্ট্রি ও রিভার্স এন্ট্রি ভালভাবে বুঝে লিখতে হবে।

১৯. তারিখের ক্রমানুযায়ী হিসাব খাত লিখতে হয় ।

২০. নগদান বইয়ে কোন ধারে লেনদেন ও অনগদ লেনদেন আসে না।

২১. খতিয়ানের T ছকের মত জের/ব্যাল্যান্স নির্ণয় করতে হবে।

২২. নগদান বইয়ের নগদ টাকার কলাম সবসময় ডেবিট জের প্রকাশ করে । কখনই ক্রেডিট জের হবে না।

২৩. নগদান বইয়ের ব্যাংক টাকার কলাম সাধারন নিয়ম অনুযায়ী জের / ব্যাল্যান্স নির্ণয় করতে হবে।

২৪. ব্যাল্যান্স সি / ডি সবসময় মাসের শেষ তারিখে লিখতে হবে।

২৫. ব্যাল্যান্স সি/ ডি পরের মাসের ১ তারিখে ব্যাল্যান্স ব/ ডি হিসেবে লিখতে হবে।

কন্ট্রা এন্ট্রি বা বিপরীত দাখিলা কি? 

ব্যবসার টাকা ব্যাংকে জমা দিলে বা ব্যাংকের থেকে টাকা ব্যবসায় উত্তোলন করলে নগদান বইয়ের নগদ ও ব্যাংক টাকার মাঝে বিপরীত প্রভাব পরে। অর্থাৎ এই লেনদেন দুটি নগদান বইয়ের প্রাপ্তি ও প্রদান দুই দিকেই লিখতে হয়, তাই এদের কন্ট্রা এন্ট্রি বা বিপরীত দাখিলা বলে। এরকম লেনদেন ২ টি।

১. ব্যাংকে টাকা জমাঃ

ব্যাংক হিসাব খুললে, ব্যাংকে জমা দিলে, জমাতিরিক্ত ঋণ পরিশোধ করলে, হিসাব কাল শেষে নগদ টাকা ব্যাংকে আংশিক টাকা জমা দিলে, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া বুঝায়। এক্ষেত্রে
* নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংকের ঘরে টাকা লিখে নাম দিতে হবে নগদান হিসাব এবং নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে নগদ এর ঘরে টাকা লিখে নাম দিতে হবে ব্যাংক হিসাব।

২. ব্যাংক হতে উত্তলনঃ

অফিসের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, হিসাব কাল শেষে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উঠালে, ব্যাংক হতে ব্যবসার প্রয়োজনে উত্তোলন বুঝায়। এক্ষেত্রে 
* নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে নগদের ঘরে টাকা লিখে নাম দিতে হবে ব্যাংক হিসাব এবং নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক এর ঘরে টাকা লিখে নাম দিতে হবে নগদান হিসাব।
৩. এটির জন্য খতিয়ানের ঘরে (সি বা ক) লিখতে হয়। বিবরণীর ঘরে লেখা যাবে না।
৪. এটির নগদ প্রাপ্তি/প্রদান জাবেদায় আসে না।

রিভার্স এন্ট্রি বা উল্টা দাখিলা কি?

১. একজনের থেকে চেক পেয়ে অন্যজনকে প্রদান করলে নগদান বইয়ের দুই দিকেই নগদ ঘরে লিখতে হয়।
* নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে নগদের ঘরে টাকা লিখে নাম দিতে হবে নাম/প্রাপ্য হিসাব এবং নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে নগদ এর ঘরে টাকা লিখে নাম দিতে হবে ব্যাংক হিসাব নাম/প্রদেয় হিসাব।
২. এটির জন্য বিবরনের ঘরে (R) লিখতে হয়। খতিয়ানে লেখা যাবে না।
৩. এটির নগদ প্রাপ্তি/প্রদান জাবেদায় আসে।

নগদান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না কি কি?

যে সকল লেনদেন নগদান বইয়ে আসবে না তা হলঃ
১. বাকিতে পণ্য ক্রয়/বিক্রয়
২. বাকিতে সমপদ ক্রয়/বিক্রয়
৩. বাকিতে ক্রয়ক্রিত পণ্য ফেরত দিলে বা বাকিতে বিক্রিত পণ্য ফেরত আসলে
৪. ব্যবসায় হতে পণ্য উত্তোলন করলে
৫. মালিকের অর্থে ব্যবসায়ের জন্য সম্পদ ক্রয় করলে
৬. অবচয় ও অবলোপন সমূহ
৭. বিলের মাধ্যমে ক্রয় ও বিক্রয় করলে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Commerce Clan এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url