লেনদেন || Transaction

 

লেনদেন কিঃ

হিসাবের মূল বা মৌলিক উপাদান লেনদেন । লেনদেন অর্থ নেয়া-দেয়া / গ্রহণ-দান / আদান-প্রদান / নেওয়া-দেওয়া ।

সাধারণ অর্থে কোনো কিছু দেওয়া বা নেওয়াই হলো লেনদেন তবে ব্যবসায়ের দৃষ্টিতে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য কোনো ঘটনার মাধ্যমে কারবার/ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে ঐ ঘটনাকে লেনদেন বলে।

হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে কোনো পণ্য বা সেবা আদান-প্রদান কে লেনদেন বলা হয়। যার ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো “Transaction”। ভোক্তারা টাকা দিয়ে পণ্য বা সেবা নেন এবং ব্যবসায়ীরা সেবা বা পণ্য দিয়ে টাকা নেন।

লেনদেনের উৎসঃ

লেনদেনের উৎস হলো আর্থিক ঘটনা যেমন- পণ্য ক্রয় ২০০০০ টাকা, দোকানের ভাড়া প্রদান ৫০০০ টাকা, কর্মচারীর বেতন প্রদান ৫০০০ টাকা এগুলো সবগুলোই আর্থিক ঘটনা। আর এসব ঘটনাই থেকে লেনদেন সৃষ্টি হয়। তবে সব ঘটনা থেকে লেনদেন সৃষ্টি হয় না। যেমন- ১০০০০ টাকার পণ্য ক্রয়ের অর্ডার বা ফরমায়েশ দেয়া, ৫০০০ টাকা বেতনে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া এসকল ঘটনায় অর্থের কোন পরিবর্তন হয় না তাই এসকল ঘটনাকে লেনদেন বলা যাবে না। যে সকল ঘটনা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় সেগুলোই লেনদেন। অর্থাৎ "সকল লেনদেনই ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়।"

লেনদেনের পক্ষ সমুহঃ

প্রত্যেক লেনদেনে একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে যেখানে 
১. এক পক্ষ সুবিধা প্রদান করে এবং 
২. অপর পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করে। 
যেমনঃ অফিসের বেতন প্রদান ৫০০০ টাকা। এখানে বেতন দেওয়ার ফলে ব্যবসায়ের নগদ টাকা কমেছে মানে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে , এক পক্ষ বেতন প্রদান করেছে আরেক পক্ষ গ্রহণ করেছে তাই এটি একটি লেনদেন।

লেনদেনের বৈশিষ্ট্যঃ

(১)আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনঃ

নগদ ৮০০০ টাকা দিয়ে আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো। এখানে আসবাবপত্র বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নগদ টাকা হ্রাস পেয়েছে । অর্থাৎ আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে তাই এটি একটি লেনদেন। কিন্তু ৭০০০ টাকার আসবাবপত্র ক্রয়ের ফরমায়েশ প্রদান করলে তা লেনদেন হবে না কারণ এখানে ফরমায়েশ ( অর্ডার) দেওয়া হয়েছে এতে আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নি। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দুই ভাবে হতে পারে–

ক. পরিমাণগত বা নিট পরিবর্তনঃ

ধারে আসবাবপত্র ক্রয় ৪০০০ টাকা । এখানে ধারে আসবাবপত্র ক্রয়ের ফলে আসবাবপত্র (সম্পদ) বৃদ্ধি এবং প্রদেয় (দায়) বৃদ্ধি পেয়েছে । অর্থাৎ সমান(=) এর ‍উভয় পাশে পরিবর্তন ঘটেছে। যখন কোনো লেনদেন হিসাব সমীকরণ (সম্পদ=দায়+মালিকানাস্বত্ত্ব) এর সমান(=) এর ‍উভয় পাশে পরিবর্তন ঘটায় তখন তাকে পরিমাণগত বা নিট পরিবর্তন বলে। যেমনঃ 

খ. কাঠামোগত বা গুনগত পরিবর্তনঃ

নগদে আসবাবপত্র ক্রয় ৫০০০ টাকা । এখানে নগদে আসবাবপত্র ক্রয়ের ফলে আসবাবপত্র (সম্পদ) বৃদ্ধি এবং নগদ টাকা (সম্পদ) হ্রাস পেয়েছে । অর্থাৎ সমান(=) এর এক পাশে পরিবর্তন ঘটেছে। যখন কোনো লেনদেন হিসাব সমীকরণ ( সম্পদ=দায়+মালিকানাস্বত্ত্ব ) এর সমান(=) এর ‍শুধু মাত্র এক পাশে পরিবর্তন ঘটায় তখন তাকে কাঠামোগত বা গুনগত পরিবর্তন বলে।

(২)অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্যঃ

ম্যনেজারের বেতন দেওয়া হলো ১২০০০ টাকা। এটি একটি লেনদেন কারণ এটি পরিমাপযোগ্য । কিন্তুু ম্যনেজার মৃত্যুবরণ করলো এটি লেনদেন নয় কারণ এটি অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয়।

(৩)দ্বৈতসত্তা বা দুটি পক্ষঃ

প্রতিটি লেনদেনে অবশ্যই দুটি পক্ষ থাকবে। এক পক্ষ গ্রহণ ও অপর পক্ষ প্রদান করবে। দুটি পক্ষ ব্যতীত লেনদেন হয় না , লেনদেরে এই বৈশিষ্ট্যকে দ্বৈতসত্তা বলে। যেমনঃ নগদে পণ্য ক্রয় ৫০০০০ টাকা এখানে দুটি পক্ষ জড়িত একটি পণ্য ক্রয় অপরটি নগদ টাকা।

(৪) স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও স্বতন্ত্রতাঃ

বাকিতে ক্রয় করা হলো ৫০০০ টাকা, ১০ দিন পর প্রদেয় ৫০০০ টাকা পরিশোধ করা হলো । এখানে দুটি লেনদেনের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও একটিকে অন্যটি থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র ধরতে হবে। দুটি লেনদেনের মধ্যে কোন সম্পর্ক থাকলেও দুটিকে এক ধরা যাবে না।

(৫) লেনদেনের দৃশ্যমানতাঃ

আসবাবপত্র ক্রয় ২০০০ টাকা এটি একটি দৃশ্যমান লেনদেন কারণ এটি দেখা যায় । অপরদিকে আসবাবপত্রের অবচয ৫০০ টাকা এটি একটি অদৃশ্যমান লেনদেন কারণ এটি দেখা যায় না । লেনদেন দৃশ্যমান অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে ।

*এখানে অবচয় বলতে আসবাবপত্র ব্যবহারের ফলে মূল্য হ্রাস বোঝানো হয়েছে । মূল্য হ্রাসের ফলে ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়েছে এবং এটি দৃশ্যমান নয় তাই এটি অদৃশ্যমান লেনদেন।

(৬) ঐতিহাসিক ঘটনাঃ

দেনাদারদের মধ্য থেকে কোন দেনাদার যদি কোন কারনে টাকা না দেয় তখন তার সাথে ঐতিহাসিক (বিবাদ) সম্পর্কের ফলে দেনাদার হ্রাস পায় ফলে এটি একটি লেনদেন হয়।

(৭) হিসাব সমীকরণে প্রভাব ফেলাঃ

প্রতিটি লেনদেন হিসাব সমীকরণ (সম্পদ=দায়+মালিকানা স্বত্ব) এ প্রভাব ফেলে। যা ১নং বৈশিষ্ট্যে আলোচনা করা হয়েছে।

লেনদেনের শ্রেণীবিভাগঃ

লেনদেনকে অনেক ভাবেই শ্রেণি বিন্যাস করা যায়। আমরা আজকে সুবিধা পাওয়ার সময়কাল বা উপযোগিতা বিবেচনায় লেনদেন এর শ্রেণি আলোচনা করব।

উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার । যথাঃ
১. মূলধন জাতীয় লেনদেন
২. মুনাফা জাতীয় লেনদেন

১) মূলধনজাতীয় লেনদেনঃ 

যেসকল লেনদেনের সুবিধা দীর্ঘকাল যাবত ভোগ করা যায় তাকে মূলধনজাতীয় লেনদেন বলে। মূলধনজাতীয় লেনদেন সাধারনত অনেক বড় অংকের টাকায় হয় এবং অনিয়মিত হয় ।

মূলধনজাতীয় লেনদেন এর সাথে স্থায়ী সম্পদ , দীর্ঘমেয়াদি দায় ও মূলধন জড়িত থাকে।

কিছু মূলধনজাতীয় লেনদেনের উদাহরণঃ
আসবাবপত্র ক্রয় ৩০০০০ টাকা।
যন্ত্রপাতি বিক্রয় ২০০০০ টাকা।
নিজ অথবা অন্যের বব্যসায়ে বিনিয়োগ ৪০০০ টাকা।
শেয়ার ক্রয় অথবা বিক্রয় ৬০০০০ টাকা।
ব্যবসায়ের জন্য টিভি , ফ্রিজ ক্রয় ৮০০০০ টাকা।

২)মুনাফাজাতীয় লেনদেনঃ 

যেসকল লেনদেনের সুবিধা সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয় এবং কমসময়ের জন্যে ভোগ করা যায় তাকে মুনাফাজাতীয় লেনদেন বলে। মুনাফাজাতীয় লেনদেন সাধারনত কম টাকার হয় ও নিয়মিত হয়।

মুনাফাজাতীয় লেনদেন এর সাথে আয়-ব্যয় ,চলতি সম্পদ , চলতি দায় ও উত্তোলন জড়িত থাকে ।

কিছু মূলধনজাতীয় লেনদেনের উদাহরণঃ
নগদে পণ্য ক্রয় ৪০০০ টাকা।
ধারে পণ্য বিক্রয় ৫০০০ টাকা।
ব্যবসায় হতে উত্তোলন ২০০০০ টাকা।
বেতন প্রদান ৩০০০ টাকা।
কমিশন প্রাপ্তি ৫০০ টাকা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪