লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ || লেনদেনের প্রকারভেদ || Classification of transactions

লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ || লেনদেনের প্রকারভেদ || Classification of transactions

ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে লেনদেনকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায় । এই পোস্টে সকল দৃষ্টিকোন থেকে লেনদেনের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হবে।
লেনদেনকে অনেক ভাবে শ্রেণি বিন্যাস করা যায়। যেমন:
১. প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের ভিত্তিতে
২. উদ্দেশ্য এর ভিত্তিতে
৩. উপযোগিতার ভিত্তিতে
৪. দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে
৫. অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে

ক. উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার । যথাঃ

১. মূলধন জাতীয় লেনদেন

২. মুনাফা জাতীয় লেনদেন 

মূলধন জাতীয় লেনদেনঃ

যে সকল লেনদেন এর সুবিধা দীর্ঘ দিন (১ বছরের অধিক) পাওয়া যায় তাদের মূলধন জাতীয় লেনদেন বলে। মূলধন জাতীয় লেনদেন ব্যবসায়িক সময়ে অনিয়মিত ঘটে ও টাকার অঙ্ক বড় হয়।

যেমন: আসবাবপত্র ক্রয়-বিক্রয়, জমি ক্রয়-বিক্রয়, ব্যাংক ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি।

মুনাফা জাতীয় লেনদেনঃ

যে সকল লেনদেন এর সুবিধা অল্প দিন (১ বছরের কম) পাওয়া যায় তাদের মুনাফা জাতীয় লেনদেন বলে। মুনাফা জাতীয় লেনদেন ব্যবসায়িক সময়ে নিয়মিত ঘটে ও টাকার অংক ছোট হয়। 

যেমন: পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, বেতন প্রদান, বিজ্ঞাপন প্রদান, উপভাড়া প্রদান ইত্যাদি।

খ. অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে লেনদেন ৩ প্রকার। যথাঃ

১. নগদ লেনদেন।

২. ধারে লেনদেন / বাকি লেনদেন।

৩. অনগদ লেনদেন।

নগদ লেনদেনঃ

যে লেনদেনের সাথে নগদ অথবা ব্যাংক টাকার সম্পর্ক থাকে অর্থাৎ যে লেনদেন এর ফলে নগদ টাকা বা ব্যাংক টাকা আদান বা প্রদান করা হয় তাকে নগদ লেনদেন বলে।

পূর্বে শুধুমাত্র নগদ টাকার লেনদেনকেই নগদ লেনদেন বলা হত। বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে নগদ ও ব্যাংক লেনদেন দুটোই নগদ লেনদেন হিসেবে ধরা হয় কিন্তু লিখার সময় নগদান হিসাব ও ব্যাংক হিসাব আলাদাই লিখতে হয়।

উদাহরণঃ
১. সালামের নিকট হতে নগদে পণ্য ক্রয়।
২. পণ্য বিক্রয়।
৩. দেনাদারের নিকট হতে প্রাপ্তি।

ধারে লেনদেনঃ

যে লেনদেন বাকিতে সংঘটিত হয় অর্থাৎ লেনদেন ঘটার সাথে সাথে নগদ টাকা আদান প্রদান করা হয় না তাকে ধারে লেনদেন বলে । 
দ্রষ্টব্যঃ ক্রয় বিক্রয়ে নাম উল্লেখ থাকলে এবং সাথে নগদ বা ব্যাংক লিখা না থাকলে সেটা বাকিতে বা ধারে গণ্য হবে।

উদাহরণঃ
ধারে পণ্য ক্রয়।
আবুলের নিকট বিক্রয়।
বিদ্যুৎ বিল পাওয়া গেলো। 
ভাড়া বকেয়া রয়েছে।

অনগদ লেনদেনঃ

নগদ বা ব্যাংক ও ধারে লেনদেন এর বাইরে যেসকল লেনদেন হয় সেগুলোকে অনগদ লেনদেন বলে। এসকল লেনদেনে ধারে, ব্যাংকে বা নগদে উল্লেখ থাকে না।

উদাহরণঃ
বিনামুল্যে পণ্য বিতরণ।
যন্ত্রপাতির অবচয় ধার্য।
সুনামের অবলোপন।
ইজারা সম্পদের অবলোপন।
মালিক নিজ অর্থে ব্যবসার জন্য আসবাবপত্র ক্রয়।
বাট্টা প্রাপ্তি অথবা প্রদান ।
শেয়ারের বিনিময়ে জমি ক্রয়।

গ. প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার। যথাঃ

১. আন্তঃলেনদেন।

২. বহিঃলেনদেন।

আন্তঃলেনদেনঃ

যে সকল লেনদেন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি ও সিদ্ধান্তের কারনে সৃষ্টি হয়, কোনাে তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকে না, তাকে আন্তঃলেনদেন বলে।
সাধারণত আন্তঃলেনদেনে আয়-ব্যয় ও দায় হিসাব জড়িত থাকে না। দায়, আয় ও ব্যয় হিসাব থাকলে তা বহিঃলেনদেন হয়।

উদাহরণঃ
স্থায়ী সম্পত্তির অবচয়।
সুনামের অবোলোপন।
সঞ্চিতি তহবিল বৃদ্ধি করা হলো।
প্রধান ক্যাশিয়ার কতৃক খুচরা ক্যাশিয়ারকে টাকা প্রদান।

বহিঃলেনদেনঃ

যে সকল লেনদেনে প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনাে তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকে তাকে বহিঃলেনদেন বলে।কোনো লেনদেনে দায়, আয় ও ব্যয় হিসাব থাকলে তা বহিঃলেনদেন বলে বিবেচিত হবে।

উদাহরণঃ
পণ্য ক্রয়।
আসবাবপত্র ক্রয়।
যন্ত্রপাতি ক্রয়।
ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ।
দেনাদারের নিকট হতে টাকা প্রাপ্তি।
পাওনাদারকে টাকা পরিশোধ।

ঘ. দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার।যথাঃ

১. দৃশ্যমান লেনদেন।

২. অদৃশ্যমান লেনদেন।

দৃশ্যমান লেনদেনঃ

যে সকল লেনদেন বা এর ফলাফল চোখে দেখা যায় তাকে দৃশ্যমান লেনদেন বলে।

উদাহরণঃ
পণ্য ক্রয়।
আসবাবপত্র ক্রয়।
যন্ত্রপাতি ক্রয়।
দেনাদারের নিকট হতে টাকা প্রাপ্তি।

অদৃশ্যমান লেনদেনঃ

যে সকল লেনদেনের প্রভাব বা ফলাফল চোখে দেখা যায় না তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে।

উদাহরণঃ
স্থায়ী সম্পত্তির অবচয়।
সুনামের অবোলোপন।
প্রাথমিক খরচের অবোলোপন।

ঙ. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে লেনদেন ৩ প্রকার।যথাঃ

১. ব্যবসায়িক বা কারবারি লেনদেন।

২. অব্যবসায়িক বা অকারবারি লেনদেন।

৩. ব্যক্তিগত লেনদেন।

কারবারি/ ব্যবসায়িক লেনদেনঃ

মুনাফা অর্জনের ‍উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে যেসকল লেনদেন সংঘটিত হয় তাকে ব্যবসায়িক বা কারবারি লেনদেন বলে। 

উদাহরণঃ
পণ্য ক্রয়।
পণ্য বিক্রয়।
বেতন প্রদান।

অব্যবসায়িক বা অকারবারি লেনদেনঃ

যে সকল লেনদেনের উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয় ঐ সকল লেনদেনকে অব্যবসায়িক বা অকারবারি লেনদেন বলে। 

উদাহরনঃ
মাদ্রাসায় দান।
কর্মীদের ফুটবল খেলার আয়োজন বাবদ খরচ।
অনুদান প্রদান।

ব্যক্তিগত লেনদেনঃ

মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে যে সকল লেনদেন সম্পাদন করে তাকে ব্যাক্তিগত লেনদেন বলে।
উদাহরনঃ 
ছেলের স্কুলের বেতন প্রদান।
মেয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যে গহণা ক্রয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪